আওয়ারা -শফিউদ্দিন সরদার

0

নাম : আওয়ারা
লেখক : শফিউদ্দিন সরদার
(একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস)

ডাউনলোড


পাঠকের জন্য বইয়ের প্রথম থেকে কিছু অংশ দিলাম পড়েই দেখুন.......

এক

‘রসূল নামের ফুল এনেছিরে-
আয়, পাহৰি মালা কে?
ঐ মালা পরে রাখৰি বেঁধে,
আল্লাহ তাআলাকে-
আয়, পাঁথবি মালা কে?'
সরােবরের শানবাঁধা ঘাটের উপর সটান শুয়ে আছেন শাহ সুলতান। লােকে বলে শাহ সুরতান মাহী সওয়ার। ডাক নাম
সুরতন সাহেব। ছিটকে পড়ছে সুলতান সাহেবের রূপ। 'বলখের রাজপুত্র শাহ সুলতান ওরফে সুরতন সাহেব
জন্মগতভাবেই অপরিসীম সৌন্দর্যের অধিকারী। তার চিত্তহারী চেহারা চিত্ত বিকল করে সকল রূপসীরই। কিন্তু কোন
রূপসীর রূপ চিত্ত বিকল করে না সুরতান সাহেবের। জন্মগতভাবে সে 'আওয়ারা'।
সরােবরের শানবাঁধা ঘাটে টান হয়ে শুয়ে আছেন সুরতান সাহেব। কোনদিকেই তাঁর খেয়াল নেই। সে একমনে গেয়ে
যাচ্ছে- “আয়, গাঁথবি মালা কে?”

আধার রাতের মুসাফির বাই নসিম হিজাযী


স্থান চট্টগ্রাম। সেখানকার এক সম্রান্ত ব্রাহ্মণকন্যা সুরমা রানী ঘাটে এলেন কলসী ভরতে। কিন্তু ঘাটে নামতে গিয়েই চমকে
পেলেন তিনি। গােটা ঘাট জুড়ে পড়ে আছেন দেবতুল্য এক মানুষ। অর্থাৎ সুরতান সাহেব ঘাটের শানে পা রাখার কোন ঠাই
রাখেননি তিনি। সুরমা রানী অবাক বিস্ময়ে দেখলেন, মানুষ তাে নয়, যেন আসমানের জ্বলন্ত সূর্যটাই ঘাটের শানে নেমে
এসে দপ দপ করে জ্বলছে। মানুষ এতাে দর্শনধারী হয়, সুরমা রানী তা কল্পনা করতে পারেননি। তিনি কিছুক্ষণ অবাক বিস্ময়ে চেয়ে চেয়ে এই অপরূপ অবলােকন করলেন। কিন্তু রূপ দেখার সময় তার অল্প। কলস ভরে জলদি জলদি ঘরে
ফিরতে হবে তাকে। তাই শায়িত ব্যক্তিটিকে লক্ষ্য করে সুরমা রানী জোরে জোরে আওয়াজ দিলেন কয়েকবার। কিন্তু কোন
ফল হলাে না তাতে। শায়িত ব্যক্তিটি আপন মনে গেয়েই চললেন- “আয়, গাঁথৰি মালা কে?

অনিঃশেষ আলাে -এনায়েতুল্লাহ আলতামাস 


বিরক্ত হলেন সুমা রানী। ক্ষিপ্তকণ্ঠে বললেন- এই যে ফুলএয়লা। শুনতে পাচ্ছেন? আপনি গােটা ঘাট জুড়ে পড়ে থাকলে আমি ঘাটে নামবাে কি করে?

এবার শুনতে পেলেন গায়ক। বললেন- ও, ঘাটে নামবেন; নামুন, নামুন। এই যে আমি আমার দুই পা গুটিয়ে নিচ্ছি,
আপনি ঐ দিক দিয়ে ঘাটে নামুন।
সুরমা রানী তাই করলেন। সুরতান সাহেবের পায়ের পাশ দিয়ে সরােবরের পানিতে নামলেন। এরপর কলসীর মুখ ডুবিয়ে
দিলেন পানিতে। কিন্তু সুরমা রানীর চোখ কলসীর মুখের দিকে রইলাে না। তার চোখ নিবদ্ধ রইলাে সুরতান সাহেবের অনন্য সুন্দর মুখের দিকে। যখন কলসী ভরে তলিয়ে যেতে লাগলাে পানির মধ্যে, তথন হুশ ফিরল সুরমা রানীর। তিনি
কলসী কাখে নিয়ে উঠে গেলেন ঘাট থেকে। উঠে যাওয়ার সময়ও যতক্ষণ দেখা যায়, ততক্ষণ তার চোখ রইলাে সুরতান
সাহেবের মুখের দিকে।

ফেরারী নারী ফিরে এসাে ঘরে


রাধা কৃষ্ণের কাহিনীতে আছে- ঘাটের উপর গাছের ডালে কৃষ্ণের বাঁশি বেজে উঠলেই ভরা কলসী ঢেলে ফেলে শ্রী রাধিকা ছুটে ঘাটে যেতাে কলসী ডরতে। সুমা রানীর ক্ষেত্রে কোন ৰাশি বেজে উঠতে হলাে না সুৱতান সাহেবের রূপ-লাবণ্যের
আকর্ষণে সুরমা রানী ভরা কলসী সেলে ফেলে আবার ঘাটে এলেন কলসী ভরতে। সুরতান সাহেব পূর্ববৎ পড়ে ছিলেন শানের উপর। সুরমা রানী এবার মধুরকণ্ঠে বললেন- এই যে, শুনতে পাচ্ছেন?
অর্ধচৈতন্য অবস্থায় সুরতান সাহেব প্রশ্ন করলেন কে?
সুরমা রানী বললেন- আমি আবার এসেছি কলসী ভরতে?
সুরতান সাহেব নির্লিপ্তকণ্ঠে বললেন- ও!
সুমা রানী বললেন- আপনি সব সময় ঘাটে পড়ে থাকেন কেন?
সুরতান সাহেব বললেন- কোথায় যাবাে?

: আপনার বাড়িঘর নেই?
: না
: সেকি, থাকার কোন জায়গা নেই?
: না
: খাবার জায়গা? মানে খাওয়া দাওয়ার স্থান?
: না, নেই।
: তাও নেই?
: না
: তাহলে খান কি?
: কেউ দিলে খাই, না দিলে না খাই।
: না খেয়েই থাকেন?
: তাছাড়া উপায় কি?
: না খেয়ে কেউ বাঁচে?
: আমি জানি না।
: না খেয়ে থাকলে মানুষ তাে মরে যায়।
আমিও মরে যাবাে। কেউ একান্তই কিছু না দিলে আমিও মরে যাবাে।
: এর আগে দুই একবার মরেছেন?
: না, সে অভিজ্ঞতা নেই।
: সে অভিজ্ঞতা নেই?
: না। কেউ না কেউ কিছু না কিছু খাইয়েছে, তাই মরিনি।
: এই ঘাটে এসে খাওয়ায়?
: মানে?
: সব সময় এই ঘাটেই পড়ে থাকেন?
: না। কখনাে এখানে, খননা সেখানে থাকি। রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে কেউ না কেউ কি খাওয়ায় বলে মরি না।
একান্তই কেউ কিছু না খাওয়ালে মরে তাে যাবােই।
: আজ কিছু খেয়েছেন?
: না, কয় দিন হলাে কিছু খাইনি।
: তাজ্জব! আপনি কোথা থেকে আমাদের এখানে এসেছেন?
সুরতান সাহেব ক্লান্তকণ্ঠে বললাে আমার মনেই নেই।
সুরমা রানী নাখােশকণ্ঠে প্রশ্ন করলেন- মনেই নেই মানে? মনে নেই কি কথা?
কোন জবাব দিলেন না সুরতান সাহেব। সুরমা দেবী কণ্ঠে জোর দিয়ে বললেন- কি হলাে? জবাব দিচ্ছেন না কেন?

তাফসীরে মা'রিফুল কোরআন


আর কোন জবাব দিলেন না সুরতান সাহেব। চোখবুজে কেবলই ধুকতে লাগলেন। সুরমা বানী আরাে কয়েকবার প্রশ্ন করলেন। কিন্তু সুরতান সাহেব নীরব। তা দেখে হতাশ দিলে ফিরে গেলেন সুরমা রানী। পরের দিন আর এলেন না।
কিন্তু মন মানলাে না। তার পরের দিন প্রত্যুষেই সুরমা রানী আবার ছুটে এলেন ঘাটে। কিন্তু এসে দেখলেন, সব শেষ।
ফুলওয়ালার কন্ঠে কোন গানও নেই, দেহের কোন নড়ন চড়নও নেই। একদম নীৰৰ নিথর।

চমকে উঠলে সুরমা রানী। নাকে হাত দিয়ে নিঃশ্বাস পরীক্ষা করলেন। কিন্তু নিঃশ্বাস পড়ছে কিনা বুঝতে পারলেন না। মরেই গেছে ভেবে কাতর হলেন সুরমা দেবী। হঠাৎ দেখলেন, একবার একটু মুখ হা লাে লাশ। তার জিহ্বা অল্প একটু
নড়ে উঠলাে। এরপর আবার সব নীরব হয়ে গেল।

সুরমা রানী বুঝলেন, লােকটার অন্তিম সময় উপস্থিত। অনাহারেই মরে যাচ্ছে লােকটা। বুঝতে পেরেই বাড়িতে ছুটে গেলেন সুরমা রানী। বাড়ির বিশ্বস্ত চার হরিদাস ও অন্যান্য চাকরদের হুকুম করলেন তার সাথে ছুটে আসতে। সুরমা
রানীর হুকুম রাজ হুকুমেরও বাড়া। হুকুমের একটু ইংগিত পাওয়ার সাথে সাথে তার পেছনে ছুটে এলাে বাড়ির চাকর-বাকর সকলেই। সুরমার পিতা-মাতাও চঞ্চল হয়ে উঠলেন। চাকর-বাকরদের সাথে নিয়ে ঘাটে এসেই সুরমা রানী সুৱতান
সাহেবকে বাড়িতে তুলে আনার হুকুম দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে সবাই সুরতান সাহেবকে শূন্যে তুলে নিয়ে চলে এলাে বাড়িতে।

আশরাফুল হেদায়া আরবী- বাংলা


এরপরে শুরু হলাে শুশ্রুষা। দাসদাসী নিয়ে সুরমা রানী নিজেই সুরতান সাহেবের শুশ্রুষার লেগে গেলেন। অতি সতর্কতার সাথে আগে রােগীকে তরল পানীয় পান করালেন। পান করানাের সাথে সাথে নড়ে উঠলাে রােগী। এরপর আস্তে আস্তে কিছু
তরল খাদ্য খাওয়ালেন। আহার পেটে যাওয়ায় স্বস্তির সাথে ঘুমিয়ে গেল রােগী।

ঘুম ভাঙ্গার পরই সুরমার পিতা-মাতা রােগীর পরিচয় জানার চেষ্টা করলেন। কিন্তু সুরমা দেবী রাগত চোখে তাদের সরিয়ে দিলেন সেখান থেকে। দু'দিন দু'রাত পর নিজে নিজেই উঠে বসলেন রােগী সুৱতান সাহেব। এবার সুরমা রানী নিজেই তাঁর
পয়-পরিচয় নিতে শুরু করলেন। প্রশ্ন করলেন- তুমি, মানে আপনি কে?
জবাৰে সুরতান সাহেব সরাসরি বললেন আমার মনে নেই।
সুরমা রানী বিস্মিতকণ্ঠে বললেন- মনে নেই মানে? মনে করার চেষ্টা করুন।
: চেষ্টা?...........................

বাকিটা আমরা বইয়ের ভিতরেই পড়ব
তাহলে আর দেরি কেন এক্ষুনি ডাউনলোড করে নিন।

ডাউনলোড


Post a Comment

0Comments

আপনার মুল্যবান মন্তব্য আমাদের সামনে আগানোর প্রেরণা যোগায়।

Post a Comment (0)