নাম : কিংসায়মনের রাজত্ব
লেখক : নসিম হিজাযী
অনুবাদক : আব্দুল হক্ব
প্রীতি প্রকাশন
ডাউনলোড
কাহিনীর আগের কাহিনী
এ গ্রন্থ রচনায় পুরােনাে দিনের দুটো মশহুর কাহিনী আমাকে অনুপ্রাণিত
করে। প্রথম কাহিনীটি হচ্ছে ঃ জনৈক দরবেশ এবং তার এক অল্প বয়স্ক শাগরেদ
শহর থেকে দূরে এক জঙ্গলে বাস করতাে। দরবেশ সবসময় আল্লাহর স্মরণে মগ্ন
থাকতাে আর শাগরেদ ভক্তিভরা চিত্তে দরবেশের খেদমত করতাে। খাবারের
দরকার হলে শাগরেদ আশপাশের লােকালয়ে চলে যেতাে এবং চেয়েচিন্তে যা
পেতাে তাই এনে দরবেশকে দিতাে এবং নিজেও খেতাে।
এই দরবেশের হৃদয় ছিল বড় কোমল এবং মানব প্রেমে পরিপূর্ণ। সকাল
সন্ধ্যায় দরবেশ গভীর আবেগে আল্লাহর দরবারে মােনাজাত করতাে, ওগাে
আমার পরওয়ার দিগার। আমি একজন নিরূপায় আশ্রয়হীন মানুষ। তাই তােমার
বান্দাদের কোন খেদমত করতে পারি না। কিন্তু তুমি যদি আমাকে বাদশাহ
বানিয়ে দাও, তাহলে আমি জীবনভর গরীব দুঃখী মানুষের খেদমত করবাে।
এতিম, মিসকীন, দুঃস্থ ও সহায়-সম্বলহীন মানুষকে সাহায্য করবাে। অভাবগ্রস্থ
মানুষের জন্য লঙ্গরখানা খুলে দেবাে এবং মানুষের মাঝে ন্যায় ও সুবিচার প্রতিষ্ঠা
করবাে। মজলুমের সহায়তা করবাে আর অত্যাচারী ও ব্যাভিচারী লােকদের
দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করবাে। আমি সমাজ থেকে সুদ, ঘুষ, মদ, জুয়া এবং
সব ধরনের পাপকাজ ও বেহায়াপনা উচ্ছেদ করবাে। ভাল কাজে আমি মানুষকে
উৎসাহিত করবাে, সকল কল্যাণকর কাজে তাদের সাহায্য ও সহযােগিতা
করবাে। আমি সারা দেশে মসজিদ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করবাে।
তরুণ শাগরেদ গভীর নিষ্ঠা ও আগ্রহ নিয়ে দরবেশের এ প্রার্থনায় হতাে।
সে ভাবতাে, একদিন অবশ্যই মুর্শিদের দোয়া কবুল হবে এবং তাদের ভাগ্য
সুপ্রসন্ন হয়ে যাবে। কিন্তু সময় গড়িয়ে যেতে লাগল । কিশাের শাগরেদ যৌবনে
পদার্পণ করল। মহাপ্রাণ দরবেশের চেহারায় বার্ধক্যের চিহ্ন দেখা দিল, কিন্তু
তাদের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হলােনা।
দেখতে দেখতে শাগরেদটির বিশ্বাসে চিড় ধরল। দরবেশের দোয়ায় আর
তার কোন আগ্রহ রইল না। আস্তে আস্তে তার মধ্যে ভাবান্তর এলাে এবং সে
দরবেশের উল্টো দোয়া করবে বলে মনস্থির করলাে। একদিন যখন দরবেশ
দোয়ার জন্য হাত তুলল, তখন সে তার কাছাকাছি না বসে কয়েক কদম দূরে
গিয়ে বসল এবং নীচু স্বরে এই দোয়া শুরু করল, ওগাে আমার পরওয়ারদিগার!
আমার মুর্শিদ বুড়াে হয়ে গেছে। তার চুল দাড়ি সব ফকফকা শাদা। দাঁত পড়ে
গেছে; দৃষ্টিশক্তি লােপ পেয়েছে। বলতে গেলে তার এখন কবরের ডাক এসে
গেছে। এখন আর সিংহাসন দিয়ে তিনি কি করবেন?
. হে প্রভু, তার সারা জীবনের দোয়া তুমি কবুল করােনি। আমার মনে হয়
কোন মহৎ হৃদয় ব্যক্তিকে বাদশাহ বানানাে তােমার পছন্দ নয়। তাই যদি হয়
তাহলে খােদা তুমি আমার দোয়া কবুল করাে। দরবেশের পরিবর্তে আমাকেই
তুমি বাদশাহ বানিয়ে দাও। আমি তােমার কাছে শপথ করছি, আমার প্রতিটি
কাজ আমার মুর্শিদের কামনা-বাসনার বিপরীত হবে। আমি ঐকান্তিক নিষ্ঠা ও
আন্তরিকতার সাথে ওয়াদা করছি, অসহায়দেরকে আরাে অসহায়, নিরাশ্রয়দের
আরাে নিরাশ্রয় এবং মজলুমদেরকে আরাে মজলুম বানাবার জন্য আমি সর্বদা
সচেষ্ট থাকবাে। আমি চোর-ডাকাতদের পৃষ্ঠপােষকতা করবাে। শরীফ ও ভদ্র
লােকদেরকে আমি অপদস্ত করব। আমি সুদখাের ও পাপিষ্ঠদেরকে পুরস্কৃত
করব। নির্বিচারে মসজিদ ও মাদ্রাসায় তালা লাগিয়ে সারা দেশে অশ্লীলতা ও
বেহায়াপনার বন্যা বইয়ে দেবাে।
* প্রথম দিকে শাগরেদটি চুপে চুপে এ দোয়া করত। কিন্তু ধীরে ধীরে তার
সাহস বৃদ্ধি পেতে থাকল। কিছুদিন পর মুর্শিদ যখনই দোয়ার জন্য হাত তুলত;
তখনই সে তার কাছে বসে উচ্চস্বরে নিজের দোয়ার পুনরাবৃত্তি করতে থাকতাে।
দরবেশ যখন অশ্রুসজল চোখে বলতাে, আমি বাদশাহ হলে ন্যায় ও সুবিচার
প্রতিষ্ঠা করব তখন শিষ্য বলত, আমি বাদশাহ হলে জুলুম ও পাপের পতাকা
উড়িয়ে দেব। দরবেশ বলত, আমার ভান্ডার থেকে অসহায় নিরাশ্রয় লােকদেরকে
ভাতা দেবাে; শাগরেদ বলত, আমি এমন লােকদের ওপর জরিমানা আরােপ
করবাে। শিষ্যের এ অধপতনে দরবেশ মনে খুব কষ্ট পেতেন এবং তাকে ধমক
দিতেন। এমনকি কোন কোন সময় লাঠি নিয়ে মারতে উদ্যত হতেন। কিন্তু
আপনার মুল্যবান মন্তব্য আমাদের সামনে আগানোর প্রেরণা যোগায়।