চুড়ান্ত লড়াই -নসিম হিজাযী

0

 

চুড়ান্ত লড়াই

লেখক : নসিম হিজাযী

 

যুদ্ধবন্দী হিসেবে নন্দনার কেল্লায় রণবীরের জিন্দেগীর সকাল-সন্ধ্যা অসহনীয় হয়ে উঠেছিল। বন্দী জীবনের গােড়ার দিকে সে বেশ ধৈর্য্যের পরিচয় দিয়েছিল। পলায়ন করার বাসনা তার মনে বাসা বেঁধেছিল। কল্পনার পাখায় ভর করে সে কখনাে দক্ষিণ হিন্দুস্তানের রাজা-মহারাজাদের সম্মিলিত হামলা করতে দেখত। স্বপ্নঘােরে দেখত, কারার লৌহ কপাট খুলে ঘােড়ার পিঠে সওয়ার হয়ে সে গাঙ্গেয় এলাকাস্থিত বাড়িতে পৌছে গেছে। ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখত, হায়! কোথায় গঙ্গা? সেতাে শুয়ে আছে নন্দনার অন্ধকার কুঠরীতে। কখনাে স্বপ্নে দেখত- তার বন্ধুদের নিয়ে খােলা ময়দানে তীরন্দাযী করছে আর তার বাবা মহলের ঝুলন্ত বারান্দায় দাঁড়িয়ে পুত্রের রণচর্চায় অভিভূত হয়ে মুচকি হাসির রেখা ওষ্ঠ প্রান্তে বিলীন করছেন। তার সহােদর বােন শকুন্তলা সখীদের সাথে দোলনায় দােল খাচ্ছে। কিন্তু বন্দীজীবনের তিক্ত অনুভূতি তার স্বপ্নের দুনিয়াকে দুমড়ে মুচড়ে দেয়। এক একটি মুহূর্ত তার কাছে বছরের মত দীর্ঘ মনে হয়। সময়ের কাটা যত ঘুরত, ততই তার অসহায়ত্ব বাড়ত, অন্ধকার হয়ে আসত তার সামনে ভবিষ্যত।

 

রণবীর কনৌজের সর্দার মােহন চাঁদের পুত্র। কনৌজের দরবারে তাঁর বিশেষ পদমর্যাদা ছিল। যৌবনের দিনগুলিতে তিনি রাজ্যপালের ফৌজে একজন অফিসার হিসেবে কাজ করে আসছিলেন। উত্তর সীমান্তে জয়কৃষ্ণ নামী এক জায়গীরদার কনৌজের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘােষণা করলে রাজ্য পাল তাকে শায়েস্তা করতে প্রেরণ করেন এই মােহন চাঁদকেই। মােহন চাঁদের অসাৎ হামলায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যায় বিদ্রোহী জয়কৃষ্ণ। উপায়ন্তর না দেখে সে মহাবনের রাজ্যে আশ্রয় নেয়। রাজ্যপাল জয়কৃষ্ণের জায়গীর বাজেয়াপ্ত করে তা কয়েকজন সর্দারকে ভাগ করে দেন। এ জায়গীর বেশ কিছু ভূ-সম্পত্তিসহ জয়কৃষ্ণের আলীশান মহলটি পেয়ে যান রণবীরের বাবা মােহন চাঁদ। এ আলীশান মহলে মােহন চাঁদের খুশীর দিন স্থায়ী হয়নি।

 

বছর তিনেক পর বছরের রণবীর আর শকুন্তলাকে রেখে তার স্ত্রী পরলােক গমণ করেন। এ দু'সন্তানই মােহন চাঁদের আশা-আকাথা আর সুখ আহলাদের কেন্দ্রবিন্দু। তিনি রণবীরকে রাজ্য পালের পর সর্ব শ্রদ্ধেয় আর শকুন্তলাকে রাজরানী হিসাবে কল্পনা করতেন।


Post a Comment

0Comments

আপনার মুল্যবান মন্তব্য আমাদের সামনে আগানোর প্রেরণা যোগায়।

Post a Comment (0)