অমুসলিম দেশে মুসলিম পর্যটক -আল্লামা তাকি উসমানী

0


 


পরদিন ছিল রবিবার। পশ্চিমা দেশের মানুষের সচরাচর নিয়ম এই যে, এদিন যোহর পর্যন্ত তারা যার যার বাড়ীতে অবস্থান করে। কোন সমাবেশ বা উৎসব থাকলে তা যোহরের পর হয়ে থাকে। সেখানে মানুষ গুরুত্বসহকারে অংশ গ্রহণ করে থাকে। সুতরাং আজ যোহর নামাযের পর ইসলামিক সেন্টারে অধমের দীর্ঘ বক্তব্যের প্রোগ্রাম করা হয়েছিল। যোহরের আগ পর্যন্ত অবসর ছিল। অধমের মেজবান জনাব সামীউল্লা সাহেব প্রায় দশটার সময় আমাকে নিতে আসেন এবং মমধ্যবর্তী সময়টিতে মন্টরিয়ালের প্রসিদ্ধ অলিম্পিক স্টেডিয়াম দেখাতে নিয়ে যান। কয়েক বছর পূর্বে এখানে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। স্টেডিয়াম ও তার সংলগ্ন ভবনসমূহ সে সময় নির্মিত হয়েছিল। নির্মাণ শিল্পের দিক থেকে ভবনগুলো ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যাবলীর ধারক হওয়া ; এখন এটি একটি বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।


জায়গাটি মন্টারিয়াল নগরীর পূর্ব দিকে অবস্থিত। এটি নৈসর্গিক সৌন্দর্যের দিক থেকে মন্টারিয়ালের সর্বাধিক সুন্দর অঞ্চল। এখানে আগে থেকে একটি বিস্তীর্ণ পার্ক ছিল। কিন্তু ১৯৭৬ ঈসায়ীকে যখন এই জায়গাটি অলিম্পিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানের জন্য মনোনীত করা হয়, তখন বারো কোটি ডলার চয়ে এখানকার ডি এই ভবন নির্ম করা হয়। অদ্বিতীয় স্টেডিয়াম করুন। 


স্টেডিয়ামটি সেতারের আকৃতিতে বানানো হয়েছে। এর পেট মূল গ্রাউন্ড। তার উপর পেয়ালার আকৃতির একটি ফোল্ডিং ছাদ রয়েছে। এটি যখন ইচ্ছা উপর থেকে সরানো যায়। উপরে ছাদ থাকলে একটি অতি বিস্তৃত হলকক্ষ আর ছান উঠিয়ে নেওয়া হলে একটি মাঠের রূপ নেয়। ফোল্ডিং ছাদের আয়তন ২ লক্ষ বর্গফুট। সব মিলিয়ে এটি একশ নব্বই টন ওজনের ছাদের টাওয়ারটি ৫০ তলা ভবনের সমান।কিনারে সেতারের মাতলের আকৃতিতে ৫৫৬ ফুট উঁচু একটি টাওয়ার। একেবারে উপরে তার লাগানোর কোন ৮৫ ডিগ্রী। টাওয়ার থেকে ষ্টেবেলের শত্রু রণি ষ্টেডিয়ামের ছাদের দিকে বুলিয়ে দেয়া হয়েছে, যেগুলো একদিকে ঝুঁকে পড়া টাওয়ারের সমতা ঠিক রাখে। অপরদিকে এগুলো ছাদ উপরে উঠানোর কাজেও ব্যবহৃত হয়। এখাবে দৈত্যাকৃতির এই ছাদ পঁয়তাল্লিশ মিনিটে উপরে উঠে যায়। সেতার সদৃশ ভবনের মাঞ্চলরূপে ব্যবহৃত এই টাওয়ার বিশ্বের সর্বোচ্চ বাঁকা টাওয়ার। উপর পর্যন্ত যাওয়ার জন্য এতে একটি ক্যাবল কেবিন লাগানো হয়েছে। ক্যাবল কেবিনটি দ্বিতল বিশিষ্ট। এটি বাকা বিন্দু থেকে উপরে ওঠা সত্ত্বেও সম্পূর্ণ পথ সোজা থাকে। এতে একরে নববই জন উপরে উঠতে পারে। দুই মিনিটে উপরে পৌঁছে যায়। উপরে ওঠার পথে এর কাঁচের দেওয়ালের মাধ্যমে আশেপাশের সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়।


ভবনটি নিঃসন্দেহে নির্মাণ শিল্পের এক রজকর্ম। বিভিন্ন দিক থেকে এটি অতি বিস্ময়কর একটি ভবন। কিন্তু কোটি কোটি ডলারের এই বিরাট অংক এবং হাজার হাজার মানুষের চিন্তা ও কর্মশক্তি যে উদ্দেশ্যে বায় করা হয়েছে সেদিকে দেখলে এটি মানুষের জন্য একটি চিন্তার ক্ষেত্র প্রমাণিত হয়। ক্রীড়া, শারীরিক ব্যায়াম ও বিনোদন মানুষের জন্য অবসর সময়ের একটি কাজ হতে পারে, কিন্তু যেভাবে একে জীবনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য বানিয়ে তার পিছনে দেহ, মন ও সম্পদ বায়ের প্রতিযোগিতা চলছে, হতদরিদ্রতায় নিমজ্জিত এই বিশ্বে এর পেছনে যেভাবে কোটি কোটি ডলার বায় হচ্ছে, বিবেক, বুদ্ধি এবং ন্যায় ও ইনসাফের দৃষ্টিতে কি এর কোন বৈধতা রয়েছে। কিন্তু 'উন্নত' (?) এই যুগে এ জাতীয় চিন্তা ও পুরাতন ও রক্ষণশীলতার প্রতীক হয়ে গেছে। তাই কে এই পুরাতন কথায় কান দিবে?



Post a Comment

0Comments

আপনার মুল্যবান মন্তব্য আমাদের সামনে আগানোর প্রেরণা যোগায়।

Post a Comment (0)