الحمد لله رب العلمين والصلوة والسلام على سيد المرسلين وخاتم النـبـيـيـن سيدنا محمد واله واصحابه اجمعين ـ اما بعد
আপন ঘর বাঁচান
যুগের পরিবর্তন এত দ্রুত ঘটছে যে, পূর্বকালে যে পরিবর্তনের জন্য দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হত, এখন তা সামান্য সময়েই সংগঠিত হয়। আজকের অবস্থার সাথে বেশি দিন নয় মাত্র পনের-বিশ বৎসর পূর্বের অবস্থাকে তুলনা করলে, এটাই প্রতিয়মান হবে যে, জীবনের প্রতিটি স্তরে পরিবর্তন এসেছে। মানুষের চিন্তা-চেতনা, বুদ্ধি -বিবেচনা, লেন-দেন, আচার-ব্যবহার, বসবাসের পদ্ধতি, পারস্পারিক সম্পর্ক, মোটকথা জীবনের সর্বক্ষেত্রে এমন পরিবর্তন সাধিত হয়েছে যে, কোন কোন সময় একথা ভাবলে হতবাক হতে হয়।
আফছোছ! যদি পরিবর্তনের এ প্রবল গতি সঠিক খাতে প্রবাহিত হতো! তাহলে, আমাদের দিন ফিরে যেত। কিন্তু হায়! আফছোছ! অত্যন্ত হতাশা ও পরিতাপের সাথে বলতে হচ্ছে যে, এ সকল প্রচেষ্টা ও প্রবল গতি উল্টো দিকেই প্রবাহিত হচ্ছে। কোন এক কবি নিম্নোক্ত পংক্তিটি পাশ্চাত্য সভ্যতাকে লক্ষ্য করে বললেও আজ তা আমাদের অবস্থার প্রতিই পূর্ণভাবে ফিট হচ্ছ ।
“দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে, কিন্তু গন্তব্য স্থলের দিকে নয়"
এ কথাকে কতদিন আর কতভাবে বলা যাবে যে, পাকিস্তান ইসলাম প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জন্ম নিয়েছিলো। যাতে এ এলাকার মুসলমানগণ নিজ জীবনে খোদার বিধান বাস্তবায়িত করে সমগ্র দুনিয়ার জন্য অনুসরণযোগ্য দৃষ্টান্ত স্থাপনে সমর্থ হয়। কিন্তু আমাদের সকল প্রচেষ্টা এর বিপরীত দিকেই ব্যয় হয়েছে এবং বর্তমানেও হচ্ছে।
যে বাড়ি থেকে পূর্বে কোন কোন সময় পবিত্র কুরআন তিলাওয়াতের আওয়ায শোনা যেত, আজ সেখানে শুধু সিনেমার অশ্লীল গানের আওয়ায়ই কানে আসে। যে সকল জায়গা সর্বদা আল্লাহ্, রাসুল, সাহাবায়ে কিরাম ও বুযুর্গানে দ্বীনের আলোচনায় মুখর থাকতো, আজ সেখানে বাপ-বেটার মাঝে টি. ভি. ফিল্ম ইত্যাদির আলোচনাই সর্বক্ষণ হতে থাকে।
যে সকল পরিবারে কোন অপরিচিত নারী বা নারীর ছবি প্রবেশ অসম্ভব ও অকল্পনীয় ব্যাপার ছিলো, আজ সেখানে বাপ-বেটা, ভাই-বোন একত্রে বসে অর্ধনগ্ন নর্তকীদের নাচ দেখতে ব্যস্ত থাকে এবং এতে বন্য আনন্দ ও লাভ করে থাকে। যে সকল বংশের লোকেরা হারাম উপার্জনকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গের ন্যায় মনে করে তা থেকে সযত্নে বেঁচে থাকতো, আজ সে সকল খান্দানের লোকেরা সুদ, ঘুষ ও জুয়ার আমদানী দিয়ে নির্বিঘ্নে উদর পুর্তি করছে।
পূর্বে যে সকল মহিলা বোরকা পরিহিত অবস্থায়ও বাড়ির বাইরে বের হতে ইতস্তঃবোধ করতো, তারা আজ ওড়না ব্যবহার করা থেকেও নিজেকে মুক্ত করে নিচ্ছে। মোটকথা! ইসলামী আহকামকে আমলী জীবন থেকে এত দ্রুত প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে যে, ভবিষ্যতের চিন্তা করতে গেলে অনেক সময় অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে।
এই ভয়ানক পরিস্থিতির পিছনে যদিও অনেক কারণ আছে, তা সত্ত্বেও আমি এখন শুধুমাত্র একটি কারণ নিয়ে আলোচনা করবো। আল্লাহ পাক যেন নিজ দয়ার এর গুরুত্ব অনুধাবন করার এবং এজন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের তৌফিক দান করেন। আর সে কারণটি হলো, আমাদের সমাজে যাদেরকে দ্বীনদার মনে করা হয়, তারা নিজ পরিবারবর্গের দ্বীনী তারবিয়্যাত ও ইসলাহ সম্পর্কে একান্তই বে-ফিকির হয়ে বসে আছে। আপনি যদি আপনার আশ-পাশে দৃষ্টি ফেবান, তাহলে, একথার অনেক প্রমাণই আপনি দেখতে পাবেন যে, অনেক বাড়ির কর্তা ব্যক্তিগতভাবে খুবই দ্বীনদার, তথা নামায-রোযার পাবন্দ, সুদ-ঘুস ও জুয়া ইত্যাদি থেকে বেঁচে থাকেন, মোটামোটি দ্বীনী ইলম ও রাখেন এবং দ্বীনের ব্যাপারে জানতে খুবই আগ্রহ রাখেন।
কিন্তু তার পরিবারভুক্ত অন্যান্য লোকজনের প্রতি দৃষ্টিপাত করলে দূরবীন দিয়েও কোন ভাল গুণ দৃষ্টিগোচর হয় না। খোদা রাসূল, দ্বীন-ধর্ম, কিয়ামত ও আখিরাত ইত্যাদি মৌলিক বিষয়াবলীও তাদের চিন্তা ভাবনার একান্তই বহির্ভূত হয়ে পড়েছে। হ্যাঁ তাদের বড় থেকে বড় অনুগ্রহ এটাই যে তারা মা-বাপের ধর্মীয় কার্যকলাপ সহ্য করে নেয় এবং তা ঘৃণা করে না, কিন্তু এর চেয়ে বেশি তারা কিছু চিন্তাও করে না।
আপনার মুল্যবান মন্তব্য আমাদের সামনে আগানোর প্রেরণা যোগায়।