নাম : ইউসুফ বিন তাশফিন
লেখক : নসিম হিজাযী
অনুবাদ : আনোয়ার সাকি সেলিম
ডাউনলোড
পাঠকের জন্য বইয়ের কিছু অংশ দিলাম পড়েই দেখুন.......
বাপকা বেটা
একটি ছােট্ট বালক গায়ে-গতরে হৃষ্টপুষ্ট এক লােকের হাত ধরে গুটি গুটি পায়ে হেঁটে যাচ্ছে। তাদের সামনে সামনে হেঁটে যাচ্ছে দুই কিশাের। লােকটি তাদের উদ্দেশ করে বলল, সাদ ও আহমদ, তােমরা একটু দাঁড়াও।
ততক্ষণে সাদ ও আহমদ দুজন বাগানের ভাঙা দেয়ালটার কাছে পৌছে গেল।
পেছন থেকে ডাক শুনে তারা দাঁড়াল। লােকটির বয়স চল্লিশের কোটা ছুঁই ছুঁই।
লােকটি ওদের কাছে এসে বলল- হাসান খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।
বড় ছেলেটি বলল, আলমাস চাচা, আজ আমরা মদিনাতুজ জোহরা না দেখে যাব কী হাসান, তুমি কি খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছ নাকি?
ক্লান্ত হাসানের মুখ থেকে কোনাে কথা বের হলাে না। সে কোনাে জবাব না দিয়ে মুখটা কালাে করে একটি পাথরের ওপর বসে পড়ল। তার হাতের তীরধনুক
মাটিতে নামিয়ে রাখল। লােকটিও ধীর পায়ে হাসানের পাশে এসে একটি গাছের গুঁড়িতে হেলান দিয়ে সামনে পা ছড়িয়ে বসে পড়ল। তাদের উদ্দেশে বলল, সবাই একটু জিরিয়ে নাও। জোহরের নামাজের সময় হয়ে গেছে। আমরা নামাজ পড়ে সােজা বাড়ির দিকে রওনা দেব ।লােকটির কথা শুনে সাদ মুচকি হেসে বলল- চাচা, তুমিও কি ক্লান্ত হয়ে পড়লেনাকি?
আন্দালুসিয়ার সমুদ্রসৈকতে -এনায়েতুল্লাহ আলতামাস
কিশােরের কথায়, নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে লােকটি বলল, আরে দূর! আমি কি কচি খােকা নাকি যে দু-দশ মাইল হেঁটেই একেবারে ক্লান্ত হয়ে পড়ব!
এতক্ষণ তাদের কথা শুনছিল আহমদ। এবার সে হাসতে হাসতে বলল,
ভাইজান, দুই মাইল হাঁটলেই আলমাস চাচা ক্লান্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু ভাবখানা
এমন করেন যেন দশ মাইল পথ হেঁটে ফেলেছেন।
এবার মুখ ভার করে থাকা হাসান বিরক্ত হয়ে বলল, শােনাে, আলমাস চাচা
ঠিকই বলেছেন। আমরা তাে দশ মাইলেরও বেশি পথ হেঁটে ফেলেছি। আহমদ বলল, আমি তাে আগেই বলেছিলাম, আমাদের সঙ্গে তুমি হেঁটে পারবে না। তােমার জন্য আজ আমরা কোনাে শিকার করতে পারলাম না।
তাই নাকি! আসলে তুমি নিজে পাহাড়ে উঠতে পারােনি, তা না বলে বলছ কিনা
আমার কারণে তােমাদের শিকার করা হলাে না!
সাদ মাথা তুলে হাসানের দিকে তাকিয়ে বলল, হাসান, তুমি কি এখন সােজা বাড়ি যাবে, নাকি আমাদের সঙ্গে জোহরায় বেড়াতে যেতে পারবে?.........
সিংহশাবক -এনায়েতুল্লাহ আলতামাস
দুই
কর্ডোভা দখলে নেওয়ার ছয় মাস পর মামুন জানুন মারা যায়। অনেকে মনে করেন, মামুনের মৃত্যুর পেছনে ইবনে আক্কাশার হাত ছিল। তাঁর জীবদ্দশায়ই সব ক্ষমতা নিজের হাতে কুক্ষিগত করে নেয় ইবনে আকাশা। টলেডাের শাসনভার গ্রহণ করল মামুনের পুত্র ইয়াহিয়া। বাপের সব বদগুণে গুণান্বিত ছিল তার এই গুণধর পুত্র।কর্ডোভায় ইবনে আক্কাশার জুলুম-নির্যাতন ক্রমেই বাড়তে লাগল। তার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে দুবছর পর আলমাস কর্ডোভা ত্যাগ করে গ্রানাডায় চলে আসে। সাদকে জানায়, ইবনে আক্কাশার কর্মচারীরা তার কাছে এত বেশি কর দাবি করছে, যে দাবি মেটানাে তাদের পক্ষে আর সম্ভব নয়। শুধু আলমাস নয়, কর্ডোভার জনগণের ধৈর্যও শেষ সীমায় পৌছে গেল। আলমাসের ধারণা, যেকোনাে সময় কর্ডোভার জনগণ প্রকাশ্যে বিদ্রোহ শুরু করে দিতে পারে। পরের বছর হাসানও ফৌজি ট্রেনিং সমাপ্ত করল । নিজের খালুর ব্যবসায়ে সাহায্য করার পর অবসর সময়ে ঘােড়সওয়ারি ও তীরন্দাজিতে সে খুবই আনন্দ পেত।
কখনাে কখনাে সে আহমদের সঙ্গে পাঠাগারে যেত, তবে বেশিক্ষণ অধ্যয়ন করা তার ভালাে লাগত না।
৪৭১ হিজরি সনে কর্ডোভায় আবারও ক্ষমতার পালাবদল ঘটে। বার কয়েক ব্যর্থ চেষ্টার পর মুতামিদ এক বিশাল বাহিনী নিয়ে পুনরায় কর্ডোভা আক্রমণ করে । জনগণ প্রতিরােধ করার পরিবর্তে তাকে বরং অভ্যর্থনা জানায় । ফলে ইবনে আক্কাশা পরাজিত ও নিহত হয় এবং সেভিলের সৈন্যরা কর্ডোভার কর্তৃত্ব হাতে নেয় । কর্ডোভাবাসী ইবনে আক্কাশার জুলুম ও নিপীড়ন থেকে মুক্তি পেয়ে নিঃশ্বাস নেওয়ারও সময় পেল না, মুতামিদের দরবারি জৌলুস ও শানশওকত রক্ষার জন্য নতুন করের বিশাল বােঝা তাদের ঘাড়ের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হলাে । রানি রেমিকার বিলাসিতার উপকরণ জোগাতে গিয়ে করদাতারা অনুভব করল, তারা এক অশিক্ষিত বর্বর দস্যুর হাত থেকে রেহাই পেয়ে শিক্ষিত ও চতুর ডাকাতের পাল্লায় পড়েছে।
সাদ আলমাসকে সঙ্গে নিয়ে কর্ডোভা এলাে, কিন্তু পিতার কোনাে সন্ধান পেল। তবে কর্ডোভার নতুন গভর্নর ইবনে আক্কাশার বাজেয়াপ্ত করা সব সম্পত্তি
ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিলে সেই নির্দেশের আওতায় সাদও তার সম্পত্তি ফিরে পায় । সাদ বিষয়-সম্পত্তি দেখাশােনার দায়িত্ব তাদের একজন পুরনাে চাকরের কাছে দিয়ে আলমাসকে নিয়ে গ্রানাডা ফিরে এলাে। কর্ডোভা দখলের পর মুতামিদ মার্সিয়া দখলের পাঁয়তারা শুরু করল । উজির ইবনে আম্মার মর্সিয়া জয় করার দায়িত্ব নিয়ে মার্সিয়ার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর প্রধান ইবনে রশিদ ও মার্সিয়া কতিপয় প্রভাবশালী আমির-ওমরাহকে নানা প্রলােভন দেখিয়ে দলে ভেড়াতে সক্ষম হয়। মর্সিয়ার জনগণ তাদের আরামপ্রিয় শাসনকর্তার ওপর এমনিতেই অসম্ভষ্ট ছিল, তাই ইবনে আম্মার বলতে গেলে বিনা বাধায়ই মর্সিয়া দখল করে নিল। তারপর মুতামিদ টলেডাের শাসক ইয়াহিয়ার দুর্বলতার সুযােগ নিয়ে গােয়াদেল কুইভার থেকে গােয়াদেল আনারের মধ্যবর্তী বিশাল এলাকা ছিনিযয়ে নিল।
এদিকে স্পেনকে ছােট ছােট খণ্ডরাজ্যে বিভক্ত করায় যারা অসস্তুষ্ট ছিল, তারা মুতামিদের তৎপরতায় খুশি হলাে। কিন্তু মুতামিদকে এসব খণ্ডরাজ্য একত্রিত করতে দেখে আলফানসু শঙ্কিত হলাে। মুতামিদকে সে লিখল, তােমার
সাম্রাজ্যের বিস্তৃতির কারণে খাজনা এখন থেকে দ্বিগুণ করা হলাে।
মুতামিদ আলফানসুর ধার্য করা দ্বিগুণ খাজনা দিতে টালবাহানা শুরু করলে
আলফানসু তাকে দমন করতে সেনাবাহিনী পাঠাল। যেসব মুসলমান মুতামিদের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল, তারাও খ্রিস্টান শাসক আলফানসুর এ অভিযান সমর্থন করল। স্পেনের আলেম ও ফকিহ-সবাই একবাক্যে সেভিলকে রক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরজ বলে ফতােয়া দিল। ভেগাের প্রখ্যাত আলেম কাজি আবুল ওয়ালিদ ওলামাদের সংগঠিত করে তাদের নিয়ে বিভিন্ন শহর সফরকরতে শুরু করেন। তারা প্রতিটি শহরে গিয়ে জনগণের সামনে জেহাদের মর্ম ও গুরুত্ব তুলে ধরেন। তাদের আবেদনে সাড়া দিয়ে তরুণ ও যুবকরা দলে দলে মুজাহিদ বাহিনীতে নাম লেখাতে শুরু করল।
কাজি আবুল ওয়ালিদের এ আন্দোলনে শামিল হলেন গ্রানাডার কাজি আবু জাফর। তিনি গ্রানাডার শাসককে খ্রিস্টান শক্তি আলফানসুর বিরুদ্ধে তার
অবস্থান প্রমাণ করতে সেভিলের প্রতি সমর্থন ঘােষণার জন্য চাপ দেন। কিন্তু
গ্রানাডার শাসক সেভিলের প্রতি তার সমর্থন জানাতে রাজি না হওয়ায় কাজি
আবু জাফর জেহাদের বাণী নিয়ে আবার জনসাধারণের কাছে ফিরে গেলেন।
একদিন কাজি আবু জাফর গ্রানাডার জামে মসজিদে দাঁড়িয়ে সেভিলের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়ার জন্য জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। তার ভাষণ শেষ হতেই তিন যুবক উঠে দাঁড়াল। এদের একজন সাদ, অন্য দুজন তারই দুই সহােদর আহমদ ও হাসান। এদের দেখাদেখি আরাে পনেরাে-বিশজন যুবক উঠে দাড়াল।
কাজি আবু জাফর কয়েক দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর আড়াইশ মুজাহিদ সংগ্রহ করতে সক্ষম হন। গ্রানাডার কোনাে লােক মুতামিদের সাহায্যে এগিয়ে যাক-এটা চাচ্ছিল না গ্রানাডার বর্তমান শাসক। তাই তারা মুজাহিদদের নানা করেন। কিছুক্ষণ পরেই এ নিয়ে শাহিমহলে বৈঠক বসবে। তুমিও আমার সঙ্গে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হও।
এর কিছুক্ষণ পর বৈঠকে যােগ দেওয়ার উদ্দেশ্যে শহরের দিকে রওনা হলাে আবু
ইয়াকুব ও আহমদ বিন মুনিম।
প্রিয় পাঠক! বাকিটা নাহয় বইয়ের ভিতরেই পড়ি!! ওকে নিচ থেকে ডাউনলোড করে নিন আর উপভোগ করুন.....
আপনার মুল্যবান মন্তব্য আমাদের সামনে আগানোর প্রেরণা যোগায়।